এবার বাবার কোলে ব্যথায় কাতরাচ্ছে ৪ বছর বয়সী লেবানিজ শিশু হোসেন মিকদাদ। চিকিৎসার জন্য যখনই ডাক্তার আসছেন, তখনই ব্যথায় এক পা দিয়ে ডাক্তারকে সরিয়ে দিচ্ছে হোসেন। আর চিৎকার করে উঠছে বাবা! বাবা! বলে। হোসেন বলছে,’উনাকে (ডাক্তার) বলো আমাকে একা ছেড়ে দিতে। প্রচণ্ড ব্যথার যন্ত্রণায় চোখ ঠেকে পানি থামছেই না। সন্তানের এই অবস্থা দেখে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন বাবা। আর লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছেন।
এই কথাগুলো কোন গল্পের নয়, বরং সত্যি ঘটনা। এক মাস আগেও সব ঠিক ছিলো। কিন্তু লেবাননে হঠাৎ করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে হোসেন পরিবারের। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৮ জনের পরিবারের মধ্যে মাত্র ২ জনই বেঁচে আছেন। এই হামলায় হোসেনের মা, তিন ভাই-বোন ও ছয়জন আত্মীয় নিহত হয়েছেন। বাবা আর ৪ বছর বয়সী হোসেনই শুধু জীবিত।
এদিকে অস্ত্রোপচারের দশ দিন পর, হোসেনের ক্ষত পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, ছেলেটি ঠিকমতো সেরে উঠছে। তার ডান পায়ের উরুতে রড বসানো হয়েছে এবং সেলাই রয়েছে। ব্যথা কমে গেছে। হয়তো হুসেন দুই মাসের মধ্যে আবার হাঁটতে সক্ষম হবে। তবে, লাঠি ভর দিয়ে চলতে হবে সারাজীবন।
হোসেন তার বাবাকে বলছে, ‘একটু গোসল করবো বাবা!’ তবে ডাক্তার তার বাবাকে হোসেনের গোসল করার অনুমতি দেননি। হোসেন হাসপাতালে থাকা অবস্থায় একবারও বলেনি তার ভাই-বোন-মা সবাই কোথায়! শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও চরম বিপর্যস্ত হোসেন বলে জানিয়েছেন অর্থোপেডিক সার্জন ইমাদ নাহলে। এমন ঘটনা এখন খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে লেবাননে। একের পর এক হামলায় কেঁপে উঠছে লেবাননের শহরগুলো।
হোসেনের বাড়ি ছিলো বৈরুতে। এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ। তবে, এসব আক্রমণ চালিয়ে ইসরায়েলের বক্তব্য, হামলাটি হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিলো। তবে, কেন এতো মানুষের প্রাণ গেলো, সেই উত্তর দেয়নি ইসরায়েল। হয়তো উত্তর নেই!
গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধে, ইসরায়েলি বিমান হামলা লেবাননের আশেপাশের আবাসিক এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে তাদের যোদ্ধাদের লুকিয়ে রেখেছে। তবে, এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশটির শিশুরা। লেবাননে গত ছয় সপ্তাহে, অন্তত শতাধিক শিশু নিহত হয়েছে এবং শতাধিক আহত হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর থেকে আহত ১৪,০০০ মানুষের মধ্যে প্রায় ১০% শিশু। হামলায় অনেক শিশুই হারিয়েছে হাত কিংবা পা। অনেক শিশু’র দেহের অনেক অংশ পুড়ে গিয়েছে। শরীরে আঘাতের দাগ যেন বাসা বেঁধেছে। সেই দাগগুলো সারাজীবন স্থায়ী হয়ে থাকবে তাদের শরীরে।
এদিকে গাসান আবু সিত্তাহ নামের একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি সার্জন, যিনি হোসেনের চিকিৎসা করছেন, তিনি আঘাতের ভয়াবহতা বর্ণনা করে বলেন, এতো অল্প বয়সে শিশুটি ব্যথায় কাতরাচ্ছে। তার থেকে বড় কথা হচ্ছে, হোসেনের মতো বহু শিশু এই যুদ্ধে মানুসিকভাবে বিপর্যস্ত। এভাবে চলতে থাকলে, লেবাননের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ব্যাপক হুমকির মুখে পড়বে। সূত্র: এপি,এবিসি, ফক্স নিউজ।